Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২১st ডিসেম্বর ২০২৩

নবায়নযোগ্য শক্তি

নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable Energy) হলো এমন শক্তির উৎস যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন: সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি (জৈবভর), ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ দেশ তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি সমূহ পরিবেশ বান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ মুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি টেকশই জ্বালানি ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী আন্দোলনসমূহ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ অব্যহত রেখেছে।

বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির অধিকাংশ ব্যয় হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে, মোটরযান চলাচলে এবং বাসা বাড়ির তাপ-উৎপাদনে। এইজন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, টেকসই যানবাহন ব্যবস্থা এবং গ্রিন টেকনোলজি সমৃদ্ধ শক্তি সাশ্রয়ী গৃহস্থালি পণ্য প্রবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রক্রিয়াধীন আছে।

 

নবায়নযোগ্য শক্তির প্রকারভেদ

 

সৌর শক্তি

সূর্য আমাদের সৌরজগৎ এর কেন্দ্রীয় নক্ষত্র যা একটি বিশাল গ্যাসীয় পিন্ড। এর কেন্দ্রে ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় যা আলোক ও তাপ রূপে পৃথিবীতে পৌঁছায়। প্রধানত দুটি উপায়ে সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করা যায়। প্রথমত, সূর্য থেকে আলোক শক্তি সংগ্রহ করে দ্বিতীয়ত সূর্য থেকে তাপ শক্তি সংগ্রহ করে। আলোক শক্তি সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয় ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট বা আলোকতড়িৎ ক্রিয়া। আলোক সংবেদী অর্ধপরিবাহী দ্বারা তৈরি ফটোভোল্টাইক সেল (পিভি) ব্যবহার করে তৈরি করা হয় সোলার প্যানেল। এইসব প্যানেলের বিশাল অ্যারে বা শ্রেণি তৈরি করে আলোক শক্তি থেকে ডাইরেক্ট কারেন্ট বা ডিসি বিদ্যুৎ শক্তি সংগ্রহ করা হয়।

তাপ শক্তি সংগ্রহ করার জন্য ব্যবহার করা হয় কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার বা 'কেন্দ্রীভূত সৌর শক্তি পদ্ধতি'। অনেকগুলো দর্পনের সাহায্যে সূর্যের আলোককে একটি টাওয়ার বা মিনারের অগ্রভাবে প্রতিফলিত করা হয়। সব দর্পনের এই কেন্দ্রীভূত প্রতিফলনের ফলে সৃষ্ট তাপকে কাজে লাগিয়ে বাষ্প তৈরি করা হয় যা থেকে পরে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। এছাড়াও বাড়ির ছাদে পানি গরম করার জন্য ব্যবহার করা যায় সৌর-পানি-উত্তাপক বা সোলার ওয়াটার হিটার অথবা রান্নার জন্য সৌর চুল্লী। শীতপ্রধান দেশে বা কলকারখানায় গরম পানির চাহিদা মেটাতে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহার করা হয়। 

প্রতিদিন পৃথিবীতে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ সৌরশক্তি পৌঁছায় তা দিয়ে পুরো পৃথিবীর দুই বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাবে। 

 

বায়ু শক্তি

বায়ু প্রবাহ হয়ে থাকে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে। এটি মূলত সৌর শক্তিরই আরেক রূপ। বায়ুর গতিতে থাকে গতি শক্তি বা কাইনেটিক এনার্জি। এই গতি শক্তিকে সাধারণত টারবাইনের মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। সেই যান্ত্রিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যায়।

 

জৈব শক্তি

মানুষ অথবা পশু-পাখির বিষ্ঠা এবং পচনশীল আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। যা রান্নার কাজে বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগে। কিছু বিশেষ ধরনের শর্করা উৎপাদক শস্য যেমন সয়াবিনআখ ইত্যাদি গাছ থেকে বায়োফুয়েল তৈরি করা যায়। গাঁজন প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে মেথানল, ইথানল অথবা সরাসরি জ্বালানি হাইড্রকার্বন প্রস্তুত করা যায়। এই ফুয়েল সরাসরি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও সামুদ্রিক শৈবাল[ ব্যবহার করে সমুদ্রের পানি, বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সূর্যালোক থেকে বায়োফুয়েল তৈরির গবষণা চলছে।

গাছপালা যেগুলো বপনের পঁচিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যেই পূর্নাঙ্গ বৃক্ষে পরিণত হতে পারে সেগুলো ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা যায়। গাছের কাঠ উচ্চ-কর্মদক্ষতা সম্পন্ন চুল্লিতে পুড়িয়ে তাপ পাওয়া যায়। সেই তাপে পানি বাষ্প করে টারবাইন চালিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। একটি ম্যানেজড ফরেস্ট বা পরিকল্পিত বনে এমনভাবে হিসাব করে গাছ কাটা ও লাগানো হয় যাতে করে ঐ বনে মোট গাছের সংখ্যা কখনই না কমে, বরং বাড়ে। এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বলা হয় বায়োম্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিভিন্ন ফসলের উচ্ছিষ্টাংশ, খড়, চিটা কাজে লাগিয়েও এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যায়। এটি একটি কার্বন নিউট্রাল প্রক্রিয়া। ঐ গাছগুলো না পোড়ালেও তাতে সঞ্চিত কার্বন কোনো না কোনো ভাবে বায়ুমন্ডলে চলে যেতো।

সমুদ্র শক্তি

পৃথিবীর পৃষ্ঠের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে সাগর-মহাসাগর। এই বিশাল সমুদ্র অংশ সম্পদ ও শক্তির ভান্ডার। সমুদ্র থেকে বিভিন্ন উপায়ে নবায়নযোগ্য শক্তি সংগ্রহ করা যায়। এর মাঝে প্রচলিত কয়েকটির বর্ণনা হলো-

সমুদ্র তরঙ্গ শক্তি

সমুদ্রের তরঙ্গ বা ঢেউতে রয়েছে গতি শক্তি ও যান্ত্রিক শক্তি। এটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।

সমুদ্র তাপ শক্তি

সমুদ্র-তাপ শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়। সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর প্রায় এক কিলোমিটার নিচে গেলেই এই তাপমাত্রা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে কম স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট তরল যেমন অ্যামোনিয়ার প্রসারণ দ্বারা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

জোয়ার ভাটা শক্তি

জোয়ার ভাটার সময় দিনে দুইবার করে সমুদ্রের পানির উচ্চতা কম বেশি হয়। বাঁধ দিয়ে এই উচ্চতার পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

ভূতাপ শক্তি

জিওথার্মাল এনার্জি বা ভূতাপ শক্তি হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরের শক্তি। পৃথিবীর কেন্দ্র একটি গলিত ধাতুর পিন্ড যার তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সেই তাপমাত্রা পৃথিবী পৃষ্ঠের নীচ পর্যন্ত পরিচলন পদ্ধতিতে চলে আসে। তাছাড়াও পৃথিবীর অভ্যন্তরের তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেমন থোরিয়াম, ইউরেনিয়ামের ক্ষয়ের ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয় সেটিও ভূ-পৃষ্ঠের নীচ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। এই তাপকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।

শহুরে আবর্জনা

শহুরে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ বা 'Municipality Waste to Energy' বর্তমান যুগে দারুণ জনপ্রিয় একটি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন মাধ্যম। প্রতিটি মেগাসিটি বা বড় শহরে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টন সলিড-ওয়েস্ট বা আবর্জনা তৈরি হয়। এই আবর্জনাগুলো কাজে লাগানো যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে। আবর্জনাগুলো থেকে দাহ্য পদার্থ যেমন প্লাস্টিক, কাঠ-খড় ইত্যাদি বাছাই করে আলাদা করা হয়। সেগুলো দক্ষ ফার্নেসে পুড়িয়ে বাষ্প তৈরি করে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। উৎপন্ন গ্যাসকে বিভিন্ন উপায়ে পরিশোধন করে বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দেয়া হয়।

 

জীবাশ্ম জ্বালানির সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির মূল পার্থক্য হল শক্তির উৎসটির নবায়নযোগ্যতা, তথা যে উৎসটি ব্যবহার করা হবে সেটি যাতে সহজে নিঃশেষ না হয়ে যায়। জীবাশ্ম জ্বালানির বিভিন্ন উৎস যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদির ব্যবহারের সাথে সাথে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায়। অপরদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারের সাথে সাথে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় না। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসাবে সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস, বায়ো ফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে মোট ৬০০০০ MW (ষাট হাজার মেঘা ওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ২৪০০০ MW (চব্বিশ হাজার মেঘা ওয়াট)।

জীবাশ্ম জ্বালানি যেহেতু সীমিত তাই ভবিষ্যতের জ্বালানি ব্যবস্থা নির্ভর করবে নবায়নযোগ্য শক্তির উপরে। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। ক্রমান্বয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তিকে সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে। যেমন নবায়নযোগ্য শক্তির খরচ অনেক বেশি এবং এটি অনেক বেশি প্রকৃতি নির্ভর তথা পরিবর্তনশীল। এছাড়াও কিছু নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন সৌর শক্তি, বায়োম্যাস এর জন্য তুলনামূলক অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়।

যদিও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত গবেষণা এবং রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার ফলে নবায়নযোগ্য সৌর বিদ্যুতের দাম কমে এসেছে এবং তা ইতোমধ্যেই কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সমান দামে বিক্রি হচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তির পরিবর্তনশীলতার জন্য মানানসই ব্যাটারি ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে এবং অনেক দেশই স্মার্ট-গ্রিড পদ্ধতি স্থাপন করছে।

 

শক্তি-দক্ষতা বৃদ্ধি, আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব টেকসই জ্বালানি শক্তি উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও পদ্ধতিসমূহ খুঁজে বের করে উদ্ভাবনী সমাধানের  লক্ষ্যে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল গবেষণার জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন: সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি (জৈবভর), ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল গবেষকদের অধিক উৎসাহ প্রদান করছে।

 

 

                                                                                                                                                                                                               

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon